নানা রঙের, নানা ধরনের বিভিন্ন জাতের আম ঝুলছে গাছে। আম ছাড়াও দেখা মিলছে কাঁঠাল, লিচু, লটকন, বেলসহ নানা প্রজাতির ফলের। তবে এসব ফল খেতে হলে ক্রেতাকে কিনতে হবে পুরো গাছ। চাইলে কেনা যাবে ওই প্রজাতির ফলের গাছের চারাও। এমন সব ফলজ গাছের পাশাপাশি বনজ, ওষুধি ও সৌন্দর্যবর্ধক হাজারো প্রজাতির গাছের সমাহারে ভরে উঠেছে জাতীয় বৃক্ষ মেলা। তবে মেলা এখনো পুরোপুরি জমে না উঠলেও দর্শনার্থীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই অসংখ্য বৃক্ষপ্রেমীকে মেলায় ঘুরতে ও গাছ কিনতে দেখা গেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শুরুর তুলনায় মাঝামাঝি বা শেষের দিকে বেশি কেনা-বেচা হয়।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) সংলগ্ন মাঠে শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষ মেলা-২০২৫। ওইদিন মেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপরই শুরু হয়েছে এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলা। বাংলাদেশ বন অধিদফতরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় এই মেলা। পরিকল্পিত বনয়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি-এই সেøাগান নিয়ে এবারের মেলায় এসেছে হাজার প্রজাতির বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ।
এবার মেলায় শোভা পাচ্ছে হাজারও প্রজাতির গাছ। বিভিন্ন ফুল ও ফলদ গাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের ওষুধি ও বনজ গাছ। ফল গাছের মধ্যে আম, জাম লিচু, কাঁঠাল, আনারস, জামরুল, আমলকী, পেয়ারা, আতা, শরীফা ইত্যাদি দেশি প্রজাতির পাশাপাশি বিদেশি প্রজাতির আপেল, আঙুর, কমলা প্রভৃতি গাছের চারা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আর ফুল গাছের ক্ষেত্রে মেলায় পাওয়া যাচ্ছে রজনিগন্ধা থেকে শুরু করে দেশি ও বিদেশি গোলাপ, শিউলি, গাঁদা, জুঁই, হাসনাহেনা, ক্যাকটাস প্রভৃতি প্রজাতির গাছের চারা। অন্যদিকে বনজ গাছের মধ্যে সেগুন, মেহগনি, শাল, কড়ই, শিমুল, গর্জন ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ টাকা থেকে শুরু করে এই মেলায় ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বনসাই গাছ রয়েছে, যেগুলো ২ হাজার থেকে শুরু করে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। বৃক্ষপ্রেমীরা খুঁজে খুঁজে তাদের পছন্দ অনুযায়ী গাছ কিনছেন। খাঁন নার্সারির বিক্রয়কর্মী আসাদুল বলেন, মেলা শুরু হয়েছে, এখনো ক্রেতা সমাগম বাড়েনি। ইনডোরের গাছের চাহিদা এখন বেশি। তরুণ-তরুণীরা ঘর সাজানোর জন্য এসব গাছ কিনে নেন। তিনি জানান, অনেক পরিবেশবাদী সংগঠন ও গাছ কিনে নেন। ঢাকায় যারা ছাদ বাগান করে তাদের কেউ কেউ ৫০ থেকে লাখ টাকার গাছ কিনেন।
বৃক্ষ মেলায় কথা হয় মিরপুর থেকে আসা ছালেহা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বারান্দায় লাগানোর জন্য গাছ কিনেছি পাঁচটি। কিছু ইনডোর প্ল্যান্টস নিয়েছি। মেলা মাত্র শুরু হয়েছে, আবার এসেও কেনাকাটা করবো।
উপকর নার্সারির হামিদুল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে সবজি থেকে শুরু করে ইনডোরের সব গাছ রয়েছে। ইনডোরের গাছগুলো ৫০০ থেকে শুরু করে ২৫০০ পর্যন্ত রয়েছে। অনেক মহিলা এসে শুধু সবজি আর ওষুধি গাছ কেনেন। বন অধিদফতরের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের মেলায় বৃক্ষে ১৩৫টি স্টল ও পরিবেশের ১৫টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। তিনি জানান, পরিবেশ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৭ জুন। আর বৃক্ষ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৪ জুলাই। মেলায় অংশ নেয়া আশুলিয়া গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী মজিদ সর্দার বলেন, আমাদের কাছে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে। সামনের আরও গাছ আনা হবে। মেলার শুরু থেকেই মোটামুটি দর্শনার্থী আসছে। তবে কেনা-বেচা হবে মেলার মাঝামাঝি সময়ে। এখন যারা আসছে তাদের বেশিরভাগই গাছ দেখতে আসছে। গ্রিনল্যান্ড নার্সারির বিক্রয়কর্মী নূরে আলম বলেন, আমাদের কাছে ৪০০-৫০০ জাতের গাছ রয়েছে। সামনে ঈদ হওয়ায় এখন তেমন কেনা-বেচা নেই। শেষের দিকে কেনা-বেচা ভালো হবে আশা করি। রেনোভা নার্সারির স্বত্বাধিকারী ফাতেমা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ কতটা জরুরি সেটি বর্তমান প্রজন্মকে বোঝানোর জন্যই এই মেলায় অংশ নেয়া। আমাদের স্টলে আউটডোর প্ল্যান্টের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকারী ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে। আমরা আমাদের স্টলে আসা দর্শনার্থীদের বোঝাচ্ছি ইনডোর প্ল্যান্ট মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন ভালো বেচাকেনা হয়নি। তবে আশা করি মেলার শেষের দিকে ভালোই বেচাকেনা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি
জাতীয় বৃক্ষ মেলায় হাজার প্রজাতির গাছের সমাহার
- আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ১২:১১:২৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ১২:১১:২৬ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ